কাশ্মীরী আপেল কুল চাষ পদ্ধতি

 
কাশ্মীরী আপেল কুল চাষ পদ্ধতি

কাশ্মীরী আপেল কুল চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশে কাশ্মীরী আপেল কুল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর স্বাদ মিষ্টি, আকর্ষণীয় রঙ এবং বাজারে ভালো দামের কারণে কৃষকরা এই জাতটি ব্যাপকভাবে চাষ করছে। অন্যান্য কুলের তুলনায় এটি বড় আকারের এবং দেখতে অনেকটা আপেলের মতো বলে এর নামকরণ আপেল কুল হয়েছে।

কাশ্মীরী আপেল কুলের বৈশিষ্ট্য

  • ফলের আকার বড় ও লালচে-সবুজ।
  • গড়ে প্রতিটি ফলের ওজন ৭০–৮০ গ্রাম পর্যন্ত হয়।
  • খেতে মিষ্টি ও কচকচে। 
  • ফলন বেশি এবং গাছের আয়ুষ্কাল দীর্ঘ।
  • পরিবহনে টেকসই হওয়ায় বাজারজাত করা সহজ।

আপেল কুল এর মাটি ও আবহাওয়া

কাশ্মীরী আপেল কুল চাষের জন্য দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। জলাবদ্ধতা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। এজন্য উঁচু জমি বা উঁচু বেড তৈরি করে চাষ করা ভালো।

আবহাওয়ার দিক থেকে উষ্ণ ও রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান কুল চাষের জন্য ভালো। শীতকালে কুল গাছে ফুল আসে এবং বসন্তে ফল ধরে।

আপেল কুল এর জমি প্রস্তুতি

  • জমি প্রথমে ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে সমান করতে হবে।
  • প্রতি গর্তে ৩x৩ মিটার দূরত্বে চারা রোপণ করতে হবে।
  • গর্ত তৈরি করার সময় ২x২x২ ফুট মাপের রাখতে হবে।
  • গর্তে ১০-১৫ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি ও কিছু হাড়ের গুঁড়া মিশিয়ে মাটি ভরতে হবে।

আপেল কুল চারা রোপণ পদ্ধতি

কাশ্মীরী আপেল কুল সাধারণত কলম চারা দিয়ে রোপণ করা হয়। চারা বর্ষা মৌসুমে রোপণ করলে ভালো হয়। তবে গ্রীষ্মের শুরুতে রোপণ করলে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হয়।

রোপণের পর মাটির চারপাশে বাঁশ বা খুঁটি দিয়ে সাপোর্ট দিতে হবে যাতে বাতাসে হেলে না পড়ে।

আপেল কুল এর সেচ ও নিষ্কাশন

শীতকালে সাধারণত বেশি সেচের প্রয়োজন হয় না।

গ্রীষ্মকালে গাছে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।

বাগানে পানি জমে থাকলে ফলন কমে যায়। তাই ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

আপেল কুল এর সার ব্যবস্থাপনা

প্রতি বছর প্রতি গাছে নিম্নলিখিত সার দিতে হবে:

  • গোবর সার: ১৫–২০ কেজি
  • ইউরিয়া: ৩০০–৪০০ গ্রাম
  • টিএসপি: ২৫০–৩০০ গ্রাম
  • এমওপি: ২০০–২৫০ গ্রাম

সার ২–৩ ভাগে ভাগ করে বর্ষার আগে, ফুল আসার আগে এবং ফল ধরার সময় প্রয়োগ করতে হবে।

আপেল কুল এর রোগবালাই ও প্রতিকার

পাতা ঝরা রোগ: কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করতে হবে।

মিলিবাগ ও পোকা আক্রমণ: ইমিডাক্লোরোপ্রিড বা সিস্টেমিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

ফল পচা রোগ: ফল সংগ্রহের আগে ছত্রাকনাশক স্প্রে করা জরুরি।

ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ

কাশ্মীরী আপেল কুল সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে সংগ্রহ করা হয়। ফল পাকা হলে হাত দিয়ে সাবধানে সংগ্রহ করতে হবে। ফল সংরক্ষণের জন্য ঠাণ্ডা ও শুকনো স্থানে রাখতে হবে।

বাজারে এই কুলের চাহিদা অনেক বেশি। তাই কৃষকরা ভালো দাম পান।

আপেল কুল এর অর্থনৈতিক দিক

  • এক একর জমিতে ৮০–৯০টি গাছ রোপণ করা যায়।
  • সঠিক পরিচর্যা করলে প্রতি গাছ থেকে গড়ে ৮০–১০০ কেজি ফল পাওয়া সম্ভব।
  • বাজারে প্রতি কেজি কুল ১৫০–২০০ টাকা দামে বিক্রি হয়।
  • অর্থাৎ এক একরে কৃষক প্রায় ৮–১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।

উপসংহার

বাংলাদেশে কাশ্মীরী আপেল কুল চাষ পদ্ধতি আধুনিক কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। স্বল্প সময়ে বেশি ফলন এবং বাজারে ভালো দামের কারণে এটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সঠিক জমি নির্বাচন, সার ব্যবস্থাপনা, রোগবালাই দমন ও ফল সংগ্রহের মাধ্যমে কৃষকরা সহজেই লাভবান হতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url