ইরি ধানের চাষ পদ্ধতি | ইরি ধান কোন মাসে হয়
ইরি ধানের চাষ পদ্ধতি (Eri Dhaner Chash Paddhoti)
বাংলাদেশের কৃষিতে ইরি ধান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধান। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে বা সেচনির্ভর জমিতে ইরি ধানের চাষ কৃষকের জন্য লাভজনক। সঠিক পদ্ধতিতে ইরি ধান চাষ করলে বেশি ফলন পাওয়া যায়। এজন্য প্রয়োজন জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে পরিচর্যা ও সঠিক সময়ে ফসল তোলা পর্যন্ত সঠিক ব্যবস্থাপনা।
ইরি ধান কি?
ইরি ধান (Iri Dhan) মূলত শুকনো মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল) চাষ করা হয়। এটিকে অনেক জায়গায় বোরো ধান (Boro Dhan) নামেও ডাকা হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ও সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ধানের চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জমি প্রস্তুতকরণ
ইরি ধানের ভালো ফলনের জন্য জমি প্রস্তুত করা সবচেয়ে জরুরি ধাপ।
জমি ভালোভাবে চাষ দিতে হবে।
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
জমি সমান করতে হবে যাতে পানি সমানভাবে থাকে।
বীজ নির্বাচন ও বপন পদ্ধতি
উন্নত মানের বীজ ব্যবহার করলে ফলন বেশি হয়। বর্তমানে BRRI ধান-28, BRRI ধান-29, BRRI ধান-63 সহ বেশ কিছু জাত বাংলাদেশে জনপ্রিয়।
বীজতলা ভালোভাবে তৈরি করতে হবে।
প্রতি শতকে ৮-১০ কেজি বীজ ব্যবহার করা উচিত।
চারা সাধারণত ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।
ইরি ধানের সার প্রয়োগ
ধানের ফলনের জন্য সঠিক সার ব্যবহার করতে হবে।
ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম সঠিক অনুপাতে ব্যবহার করতে হবে।
সাধারণত হেক্টর প্রতি ২৫০-২৮০ কেজি ইউরিয়া, ১৫০ কেজি টিএসপি, ১০০ কেজি এমওপি প্রয়োজন হয়।
জৈব সার ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা বাড়ে।
সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা
ইরি ধান হলো সেচনির্ভর ধান।
প্রতি ধাপে জমিতে পানি ধরে রাখতে হবে।
চারা রোপণের পর প্রথম ২-৩ সপ্তাহ জমিতে পানির স্তর পাতলা রাখতে হবে।
শীষ আসার সময় জমিতে পর্যাপ্ত পানি রাখতে হবে।
আগাছা দমন ও পরিচর্যা
চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
প্রয়োজনে হার্বিসাইড ব্যবহার করা যায়।
রোগ-পোকা দমনের জন্য নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ জরুরি।
রোগ ও পোকা দমন
ধান চাষে সাধারণত লিফ ব্লাস্ট, ব্রাউন স্পট, মাজরা পোকা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়।
রোগ হলে সঠিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (IPM) পদ্ধতি অনুসরণ করলে খরচ কমে এবং জমি স্বাস্থ্যকর থাকে।
ফসল তোলা
ধানের শীষ যখন ৮০-৯০% পেকে যায় তখন কেটে ফেলতে হবে।
দেরি করলে ফলন কমে যেতে পারে এবং দানা ঝরে যেতে পারে।
সময়মতো ফসল কাটলে ভালো মানের চাল পাওয়া যায়।
ইরি ধানের ফলন
যদি সঠিকভাবে চাষ করা যায় তবে প্রতি হেক্টরে ৫-৭ টন পর্যন্ত ধান উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫টি এফ-এ কনটেন্ট এনালাইসিস (5F Analysis)
Fact (তথ্য):
ইরি ধান বাংলাদেশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেচনির্ভর ধান, সঠিক চাষপদ্ধতিতে প্রচুর ফলন সম্ভব।
Figure (পরিসংখ্যান):
হেক্টর প্রতি ৫-৭ টন ফলন পাওয়া যায়, সার প্রয়োগে ইউরিয়া ২৫০-২৮০ কেজি লাগে।
Future (ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা):
আধুনিক প্রযুক্তি ও রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহারে ইরি ধানের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
Feeling (অনুভূতি):
কৃষকরা ইরি ধানের মাধ্যমে ভালো আয় করে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়।
(উপসংহার):
সঠিক ইরি ধানের চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে কৃষক লাভবান হবে এবং জাতীয় খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।
